দাঁতের যত্নে আমরা প্রতিদিন ব্রাশ করি, কখনো কখনো ফ্লসও করি। কিন্তু জানেন কি, প্রতিদিনের এই যত্নের পরও দাঁতের গভীরে এমন কিছু ময়লা জমে থাকে যা সাধারণ ব্রাশ বা ফ্লস দিয়ে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়? এই জমে থাকা প্লাক এবং টার্টার ধীরে ধীরে দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করতে শুরু করে। ঠিক এই কারণে দরকার পড়ে দাঁতের স্কেলিং ও ক্লিনিং।
এই চিকিৎসা পদ্ধতি দাঁতের গভীর থেকে ময়লা ও প্লাক সরিয়ে দাঁতের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য দুটোই বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে মাড়ির রোগ, দুর্গন্ধ, দাঁতের দাগ ও হলদে ভাব দূর করতে স্কেলিং খুবই কার্যকর।
স্কেলিং ও ক্লিনিং কী?
স্কেলিং হলো দাঁতের গাঁটে জমে থাকা শক্ত প্লাক বা টার্টার অপসারণ করার প্রক্রিয়া। এটি আল্ট্রাসোনিক স্কেলার নামক যন্ত্রের মাধ্যমে করা হয়, যা খুব সূক্ষ্ম কাঁপনের মাধ্যমে জমাট ময়লা আলগা করে তুলে ফেলে।
ক্লিনিং বা পলিশিং হলো দাঁতের পৃষ্ঠতল মসৃণ ও চকচকে করার প্রক্রিয়া। স্কেলিং করার পরে দাঁতের উপরিভাগে দাগ কিংবা অমসৃণতা থেকে যেতে পারে, যা ক্লিনিং-এর মাধ্যমে দূর করে সুন্দর ও ঝকঝকে হাসি নিশ্চিত করা হয়।
অনেকটা যেমন দেয়ালে জমে থাকা ধুলো মোছার পর নতুন রঙ করলে দেয়াল যেমন ঝলমলে দেখায়, দাঁতও স্কেলিং ও ক্লিনিংয়ের পর ঠিক তেমনই সতেজ দেখায়।
কেন প্রয়োজন দাঁতের স্কেলিং ও ক্লিনিং?
নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ দেওয়া হলো:
১. মাড়ির স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে: প্লাক ও টার্টার জমে গেলে তা মাড়ির নিচে গিয়ে জিঞ্জিভাইটিস, পেরিওডোন্টাল ডিজিজ ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে। স্কেলিং সেই ক্ষতিকর জমাট ময়লা সরিয়ে মাড়িকে সুস্থ রাখে।
২. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে: খাবারের কণা ও ব্যাকটেরিয়া দাঁতের গাঁটে জমে থাকলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। স্কেলিং এই গন্ধের উৎস পরিষ্কার করে মুখে ফ্রেশনেস ফিরিয়ে আনে।
৩. দাঁতের ক্ষয় ও ছিদ্র প্রতিরোধে: দীর্ঘদিন জমে থাকা প্লাক দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে ক্যাভিটি বা ছিদ্রের সৃষ্টি করে। স্কেলিং এই ক্ষয় প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪. দাঁতের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে: ধূমপান, চা-কফি কিংবা মসলাযুক্ত খাবারের কারণে দাঁতের রঙ বদলে যায়। স্কেলিং দাঁতের প্রকৃত সাদা ভাব ও উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
৫. দন্ত চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে: ব্রেস, ব্রিজ, ইমপ্ল্যান্ট বা রুট ক্যানালের আগে মুখের গভীর পরিচ্ছন্নতা দরকার হয়। স্কেলিং সেই প্রস্তুতির একটি ধাপ।
কখন স্কেলিং করানো উচিত?
সাধারণভাবে প্রতি ৬ মাসে একবার স্কেলিং করানো উচিত। তবে এটি নির্ভর করে ব্যক্তির মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য, অভ্যাস ও দাঁতের ধরন অনুযায়ী:
- আপনি যদি ধূমপায়ী হন
- অতিরিক্ত চা-কফি বা রঙিন পানীয় পান করেন
- আপনার দাঁতে সহজেই দাগ পড়ে
- মাড়ি ফুলে থাকে বা রক্ত পড়ে
তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি একজন ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করা হয়।
স্কেলিং করার সময় কী হয়?
স্কেলিং ও ক্লিনিং একটি নিরাপদ, দ্রুত এবং প্রায় ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। সাধারণত নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করা হয়:
- প্রথমে ডেন্টিস্ট আপনার দাঁত ও মাড়ির অবস্থা পরীক্ষা করবেন।
- স্কেলার যন্ত্র ব্যবহার করে দাঁতের চারপাশ থেকে জমে থাকা টার্টার ও প্লাক সরানো হবে।
- এরপর একটি বিশেষ পেস্ট ও রাবার কাপ ব্যবহার করে দাঁতের পৃষ্ঠতল পালিশ করা হবে।
- শেষে আপনার দাঁতের জন্য উপযুক্ত ব্রাশিং পদ্ধতি, পেস্ট বা ফ্লস ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
পুরো প্রক্রিয়াটি সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিটে শেষ হয়ে যায়।
স্কেলিং কি দাঁতের ক্ষতি করে?
না, একদমই নয়। স্কেলিং করলে দাঁত দুর্বল হয়ে যায় বা ফাঁকা হয়ে যায়—এটি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা। বরং, স্কেলিং দাঁত ও মাড়িকে আগের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যবান ও পরিষ্কার রাখে। আপনি যতবার স্কেলিং করবেন, ততবারই দাঁতের চারপাশ থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সরিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।
স্কেলিং-এর পরে কী করবেন?
- স্কেলিং করার পরে ১-২ দিন দাঁতে হালকা সংবেদনশীলতা থাকতে পারে।
- এই সময়ে গরম বা ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
- নিয়মিতভাবে ব্রাশ ও ফ্লস করা চালিয়ে যান।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
স্কেলিং কোথায় করাবেন?
দাঁতের স্কেলিং ও ক্লিনিং-এর জন্য আপনি যদি বিশ্বস্ত, অভিজ্ঞ এবং যত্নশীল কোনো ক্লিনিক খুঁজে থাকেন, তবে এসএম ডেন্টাল কেয়ার হতে পারে আপনার সেরা ঠিকানা।
এখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ চিকিৎসক এবং বন্ধুবান্ধব পরিবেশে আপনাকে সেবা দেওয়া হয়—যাতে আপনার হাসি হয়ে ওঠে আরও উজ্জ্বল এবং আত্মবিশ্বাসী।
শেষ কথা: দাঁতের স্কেলিং শুধু দাঁতের সৌন্দর্য বজায় রাখে না, এটি দীর্ঘমেয়াদে দাঁত ও মাড়ির সুস্থতা নিশ্চিত করে। দেরি না করে নিয়মিত স্কেলিং ও ক্লিনিং করুন এবং পেতে থাকুন একটি সুন্দর, স্বাস্থ্যবান হাসি।