আপনি হয়তো ভাবেন, দাঁতে ব্যথা না থাকলে ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু এটা অনেকটাই ভুল ধারণা। দাঁত ও মাড়ির অনেক রোগ শুরুতে কোনো ব্যথা বা লক্ষণ না দিয়েই তৈরি হতে পারে। তাই নিয়মিত দাঁতের চেক-আপ করালে অনেক বড় সমস্যা আগেই ধরা পড়ে, আর আপনি বাঁচেন ব্যথা, খরচ ও চিকিৎসার ঝামেলা থেকে।
কতদিন পর দাঁতের চেক-আপ করানো উচিত?
সাধারণভাবে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ৬ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে অন্তত একবার ডেন্টাল চেক-আপ করানো উচিত। তবে এই সময়সীমা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কারো দাঁতের অবস্থা খুব ভালো হলে বছরে একবার যথেষ্ট, আবার কারো যদি দাঁতের সমস্যা বেশি থাকে, তাহলে বছরে দুই থেকে তিনবারও যেতে হতে পারে।
আপনার ডেন্টিস্ট আপনার দাঁত ও মাড়ির অবস্থা দেখে উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে দেবেন। যেমন, যাদের ডায়াবেটিস আছে, ধূমপান করেন বা গর্ভবতী, তাঁদের জন্য বেশি ঘন ঘন চেক-আপ প্রয়োজন হতে পারে।
দাঁতের চেক-আপে কেন যাওয়া দরকার?
চোখে দেখা না গেলেও দাঁতের ভেতরে গর্ত (ক্যাভিটি), মাড়ির অসুখ বা এমনকি মুখগহ্বরের ক্যান্সারের মতো জটিল রোগও গোপনে তৈরি হতে পারে। এই সমস্যাগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ ও কম খরচে সম্ভব হয়। কিন্তু অবহেলা করলে দাঁতে ব্যথা শুরু হতে পারে, দাঁত পড়ে যেতে পারে, এমনকি অনেক বেশি খরচ ও জটিল চিকিৎসা লাগতে পারে।
- দাঁতের ক্ষয় বা ক্যাভিটি আগে থেকেই ধরা পড়ে
- মাড়ির অসুখ প্রতিরোধ হয়
- মুখের দুর্গন্ধ কমে
- ভবিষ্যতের বড় সমস্যাগুলি এড়ানো যায়
নিয়মিত চেক-আপ করলে এসব এড়ানো যায়।
চেক-আপে কী হয়?
একজন ডেন্টিস্ট চেক-আপের সময় সাধারণত নিচের বিষয়গুলো করে থাকেন:
- আপনার স্বাস্থ্য ইতিহাস ও যেকোনো সমস্যা সম্পর্কে জানতে চান
- দাঁত, মাড়ি আর মুখের ভিতর দেখবেন
- দরকার হলে এক্স-রে করবেন
- কীভাবে দাঁত পরিষ্কার করবেন, ধূমপান বা মিষ্টি খাওয়া কমাবেন, এসব বিষয়ে পরামর্শ দেবেন
- পরবর্তী অ্যাপয়েন্টমেন্ট কখন প্রয়োজন তা জানান
আপনি যদি ঠিকমতো ব্রাশ ও ফ্লস করেন, তাও বছরে একবার হলেও ডেন্টিস্টকে দেখানো উচিত।
দাঁতের ময়লা (টারটার) থাকলে কী হয়?
নিয়মিত ব্রাশ না করলে দাঁতের উপর জমে যায় শক্ত ময়লা, যাকে বলা হয় টারটার। এটি সাধারণ ব্রাশ দিয়ে ওঠে না এবং সময়ের সঙ্গে দাঁতের উপর দাগ ফেলে ও মাড়ির রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দাঁতের স্কেলিং এবং পলিশ করার মাধ্যমে ডেন্টিস্ট এই টারটার তুলে ফেলেন। এতে দাঁত পরিষ্কার, চকচকে এবং স্বাস্থ্যবান থাকে।
এক্স-রে কেন করা হয়?
ডেন্টিস্ট কখনো এক্স-রে করতে বলতে পারেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়:
- দাঁতের ভিতরে গর্ত বা ক্ষয় আছে কি না
- চোয়ালে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না
- শিশুদের দাঁত ঠিকমতো গজাবে কি না
এক্স-রে সাধারণত নিরাপদ, তবে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রয়োজনে করা হয় এবং বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়।
দাঁতের ডাক্তারকে ভয় পান?
অনেকেই ডেন্টিস্টকে ভয় পান — বিশেষ করে ছোটবেলায় কোনো খারাপ অভিজ্ঞতা থাকলে। কিন্তু বর্তমান সময়ের ডেন্টাল প্রযুক্তি ও চিকিৎসা পদ্ধতি অনেকটাই সহজ, আধুনিক ও ব্যথাহীন। ভয় পেলে ডেন্টিস্টকে বলুন, তাঁরা আপনার ভয় কমাতে সহায়তা করবেন। চাইলে পরিবারের কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। মনে রাখুন, ভয় পেলে সমস্যাটি আরও বাড়বে।
শেষ কথা
দাঁতের রুটিন চেক-আপ একটি ছোট পদক্ষেপ হলেও, তা ভবিষ্যতের বড় ব্যথা, বড় খরচ এবং বড় ঝামেলা থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে। দাঁতে সমস্যা না থাকলেও বছরে অন্তত একবার ডেন্টাল চেক-আপ করুন।
মনে রাখুন: দাঁত ভালো তো জীবন ভালো।
আরও তথ্যের জন্য
দাঁতের চেক-আপ বা অন্য কোনও ডেন্টাল পরিষেবা নিতে চান, তাহলে নির্ভরযোগ্য ও পেশাদার সেবা পেতে যোগাযোগ করুন এসএম ডেন্টাল কেয়ারের সঙ্গে।